নদী ভাঙছে, বসতি হারাচ্ছে মানুষ; দোয়ারাবাজারে অবাধ বালু লুট
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের সারপিনপাড়া এলাকায় চেলা নদীর তীর এখন ধ্বংসপ্রায়। প্রকাশ্যে নদীর পাড় কেটে দিনের আলোয় চলছে বালু উত্তোলনের মহোৎসব। প্রভাবশালী বালু সিন্ডিকেটের এমন দৌরাত্ম্যে বসতভিটা, ফসলি জমি ও জনপদ পড়েছে চরম হুমকির মুখে। অথচ প্রশাসন রয়েছে রহস্যজনক নীরবতায়।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি প্রভাবশালী মহল দীর্ঘদিন ধরে নদীর পাড় কেটে নৌকায় করে বালু সরিয়ে নিচ্ছে। কোনো রাতের আঁধার নয়, দিবালোকে বুক চিতিয়ে চলছে এই ‘সিন্ডিকেট বাণিজ্য’। নদীর স্রোতের গতি পরিবর্তনের ফলে প্রতিদিন ভাঙছে পাড়, নদীর গর্ভে বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি। ইতোমধ্যে আশেপাশের বেশ কয়েকটি পরিবার বসতভিটা হারিয়ে আত্মীয়ের বাড়িতে কিংবা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে।
ভুক্তভোগী এক নারী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "আমার ঘরের একপাশ নদীতে পড়ে গেছে। প্রতিবাদ করলে ভয় দেখায়, অথচ প্রশাসনের যেন কিছুই যায় আসে না।"
আরেকজন বলেন, “নদী এখন আমাদের উঠানে। অথচ প্রশাসনের দায়িত্বশীল কারো টনক নড়ছে না।”
স্থানীয়রা জানান, বালুমহালের লাইসেন্সকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি চক্র নিয়মিতভাবে নদী তীর কেটে বালু তুলছে। নদী রক্ষায় পরিবেশ সংরক্ষণ আইন থাকলেও সেটি যেন কেবল কাগজেই সীমাবদ্ধ।
এ নিয়ে জানতে চাইলে দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ জানান, "বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ, এমন আশ্বাস তাঁরা আগেও বহুবার শুনেছেন, কিন্তু কখনো কোনো দৃশ্যমান ব্যবস্থা দেখা যায়নি। বরং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বালু সিন্ডিকেট আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
চেলা নদী তীরবর্তী এলাকার সচেতন নাগরিকরা দ্রুত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর অভিযান, দোষীদের শাস্তি নিশ্চিতকরণ এবং নদী রক্ষায় টেকসই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছেন।

No comments: