অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চ্যালেঞ্জ অর্থমন্ত্রীর
বিশেষ প্রতিবেদন:: করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক সুরক্ষাসহ বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ বাড়াতে সরকারের ওপর বড় ধরনের চাপ রয়েছে। আবার করোনার কারণে ব্যবসা-বাণিজ্যেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতেও কয়েক মাস সময়ের প্রয়োজন হবে। এতে করে সরকারের রাজস্ব আয় আরও সংকুচিত হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয়ের অনিশ্চয়তার মধ্যেও বড় বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছে সরকার।
- আজ আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের দ্বিতীয় বাজেট উপস্থাপন করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬৬ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা বেশি। চলতি সংশোধিত বাজেটের আকার হচ্ছে ৫ লাখ ১ হাজার ৫৭৭ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতিতে রাজস্ব আয়ের বড় ধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যেই বড় অঙ্কের বাজেট প্রস্তাব করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী। বাজেটে অর্থসংস্থান ও বাস্তবায়ন নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
করোনায় আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে টানা ৬৬ দিন সরকারি সাধারণ ছুটির কারণে অধিকাংশ শিল্প, কারখানা ও ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ ছিল। এর ফলে এ সময়ে রাজস্ব আদায়ে ভাটা পড়ে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দিক দিয়ে বাংলাদেশ এখন সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। লকডাউন-পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য এখন সচল হলেও ভোগ ও চাহিদা কমে যাওয়ায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান লোকসানে রয়েছে। মহামারী করোনাভাইরাসে ল-ভ- হয়ে যাওয়া অর্থনীতি থেকে রাজস্ব আয়ের বড় লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে সরকার। যদিও করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়ের প্রধান উৎসগুলোকে প্রণোদনা দিয়ে টিকিয়ে রাখতে হচ্ছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা’ শিরোনামের এবারের বাজেটটি প্রস্তুত হয়েছে সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে। এবারের বাজেটে সংগত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে। পাশাপাশি কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনা এবং কর্মসংস্থানকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে নানা ধরনের কৃষি ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা সম্প্রসারণ, ক্ষতিগ্রস্ত শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্যকে পুনরুদ্ধার করাসহ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে বাজেটে বিভিন্ন প্রস্তাবনা থাকছে।
জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মোট দেশ উৎপাদনের আকার (জিডিপি) ধরা হয়েছে ৩১ লাখ ৭১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১৩ দশমিক শূন্য ৫ শতাংশ বেশি। আগামী বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ বেশি।
আসন্ন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৭৮ হাজার ৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি। চলতি অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। আসন্ন অর্থবছরে কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের কর রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। আর করবহির্ভূত রাজস্ব আহরণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৩ হাজার ৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৩৫ হাজার ২ কোটি টাকা।
এছাড়া আগামী বছরে বৈদেশিক অনুদান ৪ হাজার ১৩ কোটি টাকা প্রাপ্তির প্রত্যাশা রয়েছে। নতুন বাজেটে ঘাটতির (অনুদানসহ) পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ এবং অনুদান ছাড়া ঘাটতির পরিমাণ হচ্ছে ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯৯৭ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৬ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৫০৮ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। অনুদান না পেলে চলতি অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি দাঁড়াবে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৮ শতাংশ।
ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লাখ ৯ হাজার ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ৮৪ হাজার ৯৮০ কোটি, সঞ্চয়পত্র থেকে ২০ হাজার কোটি ও অন্যান্য উৎস থেকে ৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ হিসেবে নেবে সরকার। যদিও চলতি অর্থবছরে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য ছিল ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু কাক্সিক্ষত পরিমাণে রাজস্ব আয় না হওয়ায় পরবর্তী সময়ে সংশোধিত বাজেটে ব্যাংকঋণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে ৮২ হাজার ৪২১ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ১৩ মে পর্যন্ত সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক থেকে ৮১ হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে।
অভ্যন্তরীণ ছাড়াও আগামী বছরে বৈদেশিক ঋণ নেওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরে ছিল ৫২ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। দেশের ইতিহাসে বাজেট ঘাটতি মেটাতে সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। করোনার কারণে বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে এবার কিছু বাজেট সহায়তা পেলেও এত বড় অঙ্কের বৈদেশিক সহায়তা সংগ্রহ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। আর দেশের ঋণমান, এলডিসি থেকে উত্তরণ ও দক্ষতার অভাবে বিদেশ থেকে সহজ শর্তের স্বল্প সুদের পর্যাপ্ত ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, আগামী অর্থবছরে ঋণের সুদ, ভর্তুকি ও অবসরভাতা পরিশোধে ব্যয় হবে ১ লাখ ৩৯ হাজার ৩৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভর্তুকি ও প্রণোদনাবাবদ ৪৭ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা এবং অবসরভাতা ও গ্রাচুইটিবাবদ ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। আর ঋণের সুদ পরিশোধবাবদ ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
আসন্ন বাজেটে করোনাযোদ্ধাদের জন্য ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ১০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। করোনায় প্রধানমন্ত্রীঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজে ব্যবসায়ীদের জন্য ঋণের ভর্তুকি হিসেবে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে। এছাড়া ব্যাংক ঋণের সুদ দুই মাস স্থগিত রাখা এবং এ সুদে ভর্তুকিবাবদ ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে প্রস্তাবিত বাজেটে। করোনায় লল্ডভল্ড অর্থনীতিতে তারল্যেও সরবরাহ বাড়াতে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে বিনা শর্তেই নির্দিষ্ট সময়ের জন্য মাত্র ১০ শতাংশ জরিমানা দিয়ে পুঁজিবাজার ছাড়াও ফ্ল্যাট, প্লট বা জমি কিনতে অপ্রদর্শিত অর্থ বা কালো টাকা বিনিয়োগ করার সুযোগ থাকবে।
বাজেটে ছাড় দেওয়া হতে পারে তালিকাবহির্ভূত কোম্পানির করপোরেট করেও। চার বছর পর এবার ব্যক্তি খাতে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে তিন লাখ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, রোবোটিক ও ন্যানো টেকনোলজি সংক্রান্ত খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কর অবকাশ সুবিধা দেওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। এছাড়া এভিয়েশন শিল্প, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার তৈরি, উচ্চমূল্যের গার্মেন্টস পণ্য তৈরির লক্ষ্যে ম্যান মেড ফাইবার ও অটোমোবাইলের যন্ত্রাংশ তৈরির ক্ষেত্রে এ সুবিধা দেওয়া হতে পারে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে শিক্ষা ও প্রযুক্তি, পরিবহন ও যোগাযোগ এবং স্বাস্থ্য খাত। এর মধ্যে শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৮৫ হাজার ৭৬০ কোটি টাকা, যা যেকোনো খাতের মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ। এটি আসন্ন বাজেটের ১৫ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বছরের বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৭৯ হাজার ৪৮৬ কোটি টাকা, যা সংশোধিত বাজেটে ৭৭ হাজার ৩৯ কোটি টাকায় নামিয়ে আনা হয়।
২০২০-২১ বাজেট বরাদ্দে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাত। এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ৬৪ হাজার ৫৮৭ কোটি টাকা, যা মোট ব্যয়ের ১১ দশমিক ৩৭ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ৬ হাজার ৯১ কোটি টাকা বেশি।
আসন্ন বাজেটে তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যয়ের খাত হচ্ছে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ। বাজেটে ৬৩ হাজার ৮০১ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে বিদেশি ও অভ্যন্তরীণ ঋণের সুদ পরিশোধে, যা মোট ব্যয়ের ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১০ দশমিক ৬৪ শতাংশ বেশি।
করোনাভাইরাসের কারণে দেশে এখন সবচেয়ে আলোচিত হচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। সব মহলের দাবি স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর। সরকারও এবার স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ বাড়াচ্ছে। যদিও প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। আসন্ন বাজেটের মোট বরাদ্দের ৫ দশমিক ১৪ শতাংশ থাকছে স্বাস্থ্য খাতের জন্য। ২০২০-২১ বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ থাকছে ২৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা, যা চলতি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ বেশি।
আসন্ন বাজেটে কৃষি খাতে ভর্তুকি বাড়ছে দেড় হাজার কোটি টাকা। ভর্তুকিসহ কৃষিতে মোট বরাদ্দ রয়েছে ২৯ হাজার ৯৮৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা বেশি। প্রস্তাবিত বাজেটে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে কৃষকদের ৬০ শতাংশ ভর্তুকির ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে। এজন্য ৩ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে।
জ¦ালানি ও বিদ্যুৎ খাতে আসন্ন বাজেটে বরাদ্দ কিছুটা কমছে। এবার এ খাতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৬ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা, যা চলতি সংশোধিত বাজেটে ছিল ২৮ হাজার ৫৬ কোটি টাকা। এছাড়া শিল্প ও অর্থনৈতিক সার্ভিস খাতেও ৭৯৮ কোটি টাকা কমে ৩ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা বরাদ্দ হচ্ছে। আসন্ন বাজেটে শেয়ার ও ইক্যুইটিতে বিনিয়োগ এবং বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের মূলধন সংকট মেটাতে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা বরাদ্দ থাকছে, যা চলতি সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১০৭ শতাংশ বেশি।
এবারের বাজেটে জনপ্রশাসন খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৮ হাজার ২৪০ কোটি টাকা, যা বাজেটের ব্যয়ের দিক থেকে ষষ্ঠ খাত। করোনার প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষায় আলাদাভাবে মনোযোগের দাবি থাকলেও স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন খাতে এবার বরাদ্দ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কমছে। আসন্ন বাজেটে এ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে ছিল ৪০ হাজার ৪৭৩ কোটি টাকা। তবে এবার রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ে প্রণোদনা বাড়ছে না। এবার সামাজিক সুরক্ষা ও সামাজিক কল্যাণ খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩২ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা, যা চলতি সংশোধিত বাজেটের তুলনায় ১ হাজার ১৬৬ কোটি টাকা বেশি। এছাড়া পেনশন ও গ্রাচুইটিতে বরাদ্দ রাখা হচ্ছে ২৭ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে প্রতিরক্ষা খাতে বরাদ্দ থাকছে ৩৪ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ১ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তায় বরাদ্দ থাকছে ২৮ হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা। এটি চলতি সংশোধিত বাজেটে ছিল ২৭ হাজার ৪৩৭ কোটি টাকা।
গৃহায়ন খাতে ৭১০ কোটি টাকা বরাদ্দ কমে এবারের বাজেটে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে। বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম খাতে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমনিতে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রাই পূরণ হচ্ছে না। সম্প্রতি অর্থ সচিবকে লেখা এক চিঠিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয় সর্বোচ্চ ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অন্তত ৮০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি থাকবে। পূর্ববর্তী বছরগুলোর ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনায় নিয়ে নতুন অর্থবছরে এনবিআরের রাজস্ব আয় হতে পারে ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত করা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা অযৌক্তিক। রাজস্ব আয় কম হওয়ার সম্ভাবনায় আগামী বাজেটেও ঘাটতি মেটাতে ব্যাংকের ওপর বেশি নির্ভরশীল থাকতে হবে। এতে করে তারল্য সংকট আরও বাড়বে। বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবাহ আরও কমে যাবে। আর দেশের ঋণমান, এলডিসি থেকে উত্তরণ ও দক্ষতার অভাবে বিদেশ থেকে সহজ শর্তের স্বল্প সুদের পর্যাপ্ত ঋণ পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে আগামী বাজেটে অর্থায়ন অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
এনবিআরকে টার্গেট দেওয়া ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাকে অবাস্তব বলে মনে করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। একই অভিমত ব্যক্ত করেছেন এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মজিদও। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, কারণ করজাল বিস্তৃত করা হয়নি। কর জিডিপির অনুপাতে কোনো উন্নতি নেই। জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে কিন্তু সে তুলনায় কর আসছে না। বড় প্রকল্পে কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে যারা বড় করদাতা, তারা বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বিদেশে টাকা পাচার করছে। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হওয়ায় দেশের আমদানি-রপ্তানি কমে যাবে। ফলে এ খাতে এনবিআরের আয়ও কমবে। এমন পরিস্থিতিতে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে না।
অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর চ্যালেঞ্জ অর্থমন্ত্রীর
Reviewed by তাওহীদ শাহীন
on
6/11/2020 04:37:00 PM
Rating:

No comments: