ওয়াশিংটন-মস্কো প্রস্তুত পরমানু আলোচনায়
বড় কোনো পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ‘ইতিবাচক’ প্রস্তাব প্রত্যাশা করেছে রাশিয়া। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে মস্কো বলছে, বেইজিংকে সেই চুক্তিতে সম্পৃক্ত করতে ওয়াশিংটনের চাপাচাপি ওই প্রয়াসকে ব্যাহত করবে। খবর এএফপি।
আগামী ফেব্রুয়ারিতে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া নিউ স্টার্ট চুক্তি নিয়ে ২২ জুন যুক্তরাষ্ট্রের দূত মার্শাল বিলিংসলিয়ার সঙ্গে ভিয়েনায় এক বৈঠকে বসবেন রাশিয়ার উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রিয়াবকভ। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে সরে এলেও নিউ স্টার্ট টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এ চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া উভয়েই তাদের কৌশলগত পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র অর্ধেকে নামিয়ে আনতে রাজি হয়েছিল।
চুক্তিটি সম্পাদিত হয়েছিল সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার অধীনে। কিন্তু এখন এটাকে নবায়ন করার ক্ষেত্রে ট্রাম্প প্রশাসন বলছে, নতুন আলোচনায় চীনকে সঙ্গে রাখা প্রয়োজন। কারণ, তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। চীনের পারমাণবিক অস্ত্র বৃদ্ধি পেলেও এখনো তা রাশিয়া বা যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে চীনকে সঙ্গে রাখার বিষয়ে মস্কো থেকে কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশনসের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে রাশিয়ার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন সার্গেই রিয়াবকভ। তিনি বলেছেন, চীনকে আলোচনার টেবিলে আনা উচিত হবে কি হবে না এ প্রশ্নের সরাসরি উত্তর হলো সম্ভাবনা ক্ষীণ। আরো পরিষ্কার করে বলা যায় ‘না’। এখন বিষয়টি নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। তবে তিনি এটা ইঙ্গিত দেন যে, চীনকে যদি যুক্তরাষ্ট্র আমন্ত্রণ জানায়, তাতে বিরোধিতা করবে না রাশিয়া। উল্লেখ্য, জটিল ঐতিহাসিক সম্পর্ক সত্ত্বেও রাশিয়ার আন্তর্জাতিক মিত্র চীন। তাই রিয়াবকভ বলেছেন, চীনকে আমন্ত্রণ জানালে তাদের অবশ্যই বৈঠকের সঙ্গে একমত হতে হবে।
এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র যদি চীনকে আমন্ত্রণ জানায়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র ব্রিটেন ও ফ্রান্সকেও আলোচনায় রাখা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন রিয়াবকভ। এ দুটি দেশের কাছে অল্প পরিমাণ পারমাণবিক অস্ত্র থাকলেও তাদের আলোচনায় রাখার তাগিদ দিয়েছেন তিনি। পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ নিয়ে আলোচনা শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিকে তিনি সুখবর বলে আখ্যায়িত করেছেন। বলেছেন, বল অংশত যুক্তরাষ্ট্রের কোর্টে।
গত মাসে হাডসন ইনস্টিটিউটে দেয়া এক বক্তৃতায় বিলিংসলিয়া বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প স্রেফ চুক্তির জন্য চুক্তি স্বাক্ষরে আগ্রহী নন। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের হুমকি দিতে চীন তার পারমাণবিক অস্ত্রভাণ্ডার বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন তিনি। এটাকে তিনি বেইজিংয়ের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন ও বিপজ্জনক’ আচরণ বলে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রকে ‘ওপেন স্কাইস ট্রিটি’ থেকে সরিয়ে নেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। এ চুক্তি অনুযায়ী রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও অন্য ৩২টি দেশকে অল্প সময়ের নোটিসে আরেকটি দেশের ওপর দিয়ে ফ্লাইটের ওপর নজরদারি করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এছাড়া স্নায়ুযুদ্ধ থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি চুক্তি ‘ইন্টারমিডিয়েট রেঞ্জ নিউক্লিয়ার ফোর্সেস ট্রিটি’ থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে আগেভাগেই প্রত্যাহার করে নিয়েছেন ট্রাম্প। ২০১৯ সালে ওয়াশিংটনভিত্তিক আর্মস কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশনের হিসাবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া প্রত্যেকের কাছে কমপক্ষে ছয় হাজার করে পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে। চীনের কাছে এ সময় ছিল ২৯০টি। এছাড়া ফ্রান্স ও ব্রিটেনের হাতে রয়েছে যথাক্রমে ৩০০ ও ২০০ পারমাণবিক অস্ত্র। ভারত, পাকিস্তান, ইসরায়েল ও উত্তর কোরিয়ার হাতেও কিছু পারমাণবিক অস্ত্রের মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছে ওই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি।
ওয়াশিংটন-মস্কো প্রস্তুত পরমানু আলোচনায়
Reviewed by প্রান্তিক জনপদ
on
6/11/2020 07:54:00 PM
Rating:

No comments: