টটেনহামের রূপকথা: দীর্ঘ ১৭ বছর পর শিরোপা জয়ের স্বাদ
ক্রীড়া প্রতিবেদক :
![]() |
১৭ বছর পর ইউরোপা লিগ শিরোপা জয়ের মুহূর্তে টটেনহাম খেলোয়াড়দের উল্লাস । ছবি : (AP Photo/Manu Fernandez) |
বিলবাওর আকাশে যখন রাতের তারা একে একে জ্বলে উঠছিল, তখন সান মামেস স্টেডিয়ামের সব আলো যেন ঝুঁকে পড়েছিল একটিমাত্র দলের দিকে—টটেনহাম হটস্পার। ১৭ বছরের দীর্ঘ, প্রতীক্ষাময় এক যাত্রা শেষ হলো ইউরোপা লিগের শিরোপা ছুঁয়ে। এক গোল, এক সোনালি মুহূর্ত আর অসংখ্য না বলা কষ্টগাঁথা মিলে ফুটবল রূপকথার নতুন অধ্যায় রচনা করলো স্পার্সরা।
প্রতিপক্ষ ছিল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড—ইংল্যান্ডের ফুটবল ইতিহাসের এক প্রাচীন ও প্রতাপশালী নাম। তবে এ রাতে বিজয় নির্ধারিত হলো নাম নয়, প্রাণশক্তি ও ভাগ্যবান মুহূর্তে।
প্রথমার্ধে উভয় দলই ছিল সংযত, যেন কেউ কাউকে আঘাত করতে চায় না, আবার পিছিয়েও পড়তে চায় না। পায়ে পায়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল বল, কিন্তু গোলবার যেন দূরবীন দিয়ে দেখা চাঁদের মতো অধরাই রয়ে যাচ্ছিল।
এমন ঘোর লাগা এক সন্ধ্যায় আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ—৪২ মিনিট। পাপে সার ডানদিক থেকে একটি ক্রস বাড়ান, ব্রেনান জনসনের পায়ে বল এসে পৌঁছায়। বলের সঙ্গে জনসনের সম্পর্ক যেন পুরনো কোনো বন্ধুত্বের মতো; প্রথম স্পর্শে অস্থিরতা, কিন্তু পরক্ষণেই গভীর বোঝাপড়া। ইউনাইটেড ডিফেন্ডার লুক শোর গায়ে লেগে বল ফিরে আসে জনসনের কাছে। এবার আর ভুল হয়নি। সামান্য এক ছোঁয়ায় তিনি বল পাঠান প্রতিপক্ষ জালে, আর সান মামেস তখন রূপ নেয় এক রূপকথার রাজপ্রাসাদে।
ওনানা ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, কিন্তু ইতিহাসকে কে থামাতে পারে?
![]() |
ফাইনালে একমাত্র গোলদাতা ব্রেনান জনসনের উদযাপনের দৃশ্য । ছবি : AP Photo |
গার্নাচো, ব্রুনো, লুক শোর শট—সবই ব্যর্থ করে দেন স্পার্স গোলরক্ষক গুলিয়েলমো ভিকারিও। তিনি শুধু বল রক্ষা করেননি, রক্ষা করেছেন স্বপ্ন, সম্ভাবনা, গৌরব।
![]() |
এভাবেই প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন টটেনহামের গোলরক্ষক ভিকারিও। ছবি : AP Photo |
শেষ বাঁশির শব্দ যখন বাতাসে ভেসে বেড়ায়, তখন টটেনহামের খেলোয়াড়দের চোখে জল—কেউ হাসছেন, কেউ হাঁটু গেড়ে আল্লাহকে স্মরণ করছেন, কেউবা চেয়ে আছেন আকাশের তারার দিকে, যেন ধন্যবাদ জানাচ্ছেন সেই ভাগ্যকে, যে ১৭ বছরের পিপাসার পর তাদের মুখে এক ঢোক বিজয়ের জল তুলে দিয়েছে।
ব্রেনান জনসন হয়ে গেলেন এক নাম, এক ইতিহাস। ২০০৮ সালে যখন জোনাথন উডগেট করেছিলেন শিরোপাজয়ী গোল, তখন হয়তো জনসন শুধু স্বপ্ন দেখতেন। আজ তিনিই স্বপ্নের বাস্তবায়ন।
এই জয়ে টটেনহাম পেয়ে গেল তাদের তৃতীয় ইউরোপা লিগ শিরোপা—একদা ইউরোপিয়ান ইউইএফএ কাপ নামে পরিচিত এই প্রতিযোগিতায় তারা আগে জিতেছিল ১৯৭১–৭২ এবং ১৯৮৩–৮৪ মৌসুমে। এবার সেই তালিকায় যুক্ত হলো ২০২৪–২৫ মৌসুম। তারা আজ ইউরোপের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ শিরোপাজয়ী ক্লাবগুলোর কাতারে—ইন্টার মিলান, লিভারপুল, জুভেন্টাস এবং অ্যাতলেতিকোর পাশে দাঁড়িয়ে।
এবং সামনে? সামনে চ্যাম্পিয়নস লিগ। আগামী মৌসুমে তারা ইউরোপের রাজা হবার লড়াইয়ে নামবে সরাসরি গ্রুপ পর্বে। টটেনহামের জন্য সেই পথেও শুরু হলো আরেকটি স্বপ্নের যাত্রা।
.webp)
No comments: