জামাতার হাতে শশুড় খুন এবং কিছু কথা!

 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এ ভাইটির নাম সালেহ আহমদ। অত্যন্ত লোমহর্ষক এবং হৃদয়বিদারক ঘটনায় তিনি আহত। একই ঘটনায় এ পৃথিবীর বুক থেকে চিরবিদায় নিতে হয়েছে তার সম্মানিত পিতাকে! পাষণ্ড জামাতার  হাতে তাকে বলি হতে হয়েছে। তার আরেক ভাই আলী ইমরান ঢাকায় মুমূর্ষু অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে।

আসলেই সামাজিক ও পারিবারিক বন্ধনে কী দিনদিন পচন ধরতে শুরু করেছে!বাড়িতে ডেকে নিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শশুড়কে খুন করে ফেলল জামাই। কী লোমহর্ষক ঘটনা! কী বিভৎস চিত্র!কী অমানবিক আচরণ। এমন নিষ্ঠুরতা প্রাচীন জাহিলিয়াতকেও যেন হার মানিয়েছে!

প্রায়ই এমন পারিবারিক কলহ, বিবাদবিসংবাদ , বিশৃঙ্খলা, খুনখারাবি, আত্মসাৎ, আত্মহত্যা সম্পত্তি দখল ইত্যাদি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। যা কেবল নিজেদের মধ্যেই সংঘটিত হচ্ছে। ধর্মীয় এবং নৈতিক মূল্যবোধ যেন বিদায় নিতে বসেছে সমাজ এবং পরিবার  থেকে।সুদীর্ঘ আত্মার বন্ধনের যেন বন্ধুরাবস্তা!

সামান্য ভুল বোঝাবুঝিতে সুখের ঘরে ঢুকে পড়ছে দুঃখের আগুন। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। ভেঙে যাচ্ছে পারিবারিক বন্ধন। বাড়ছে পিতাপুত্রে দ্বন্দ্ব। আর এর অন্যতম কারণ হচ্ছে নৈতিক শিক্ষার চরম অভাব। শাশ্বত ইসলামের অনুশাসন, অনুশীলন না থাকায়  একের পর এক তছনছ হচ্ছে সাজানো সংসার। বাড়ছে খুনোখুনির ঘটনাও। বাবা-মায়ের দাম্পত্য কলহের জেরে অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে নিষ্পাপ শিশু-সন্তানরা। পরবর্তীতে এ শিশুরা জড়িয়ে পড়ছে নানা অপরাধে। শিশুকাল থেকে পিতৃ-মাতৃহীনতার কারণে ঢুকে যাচ্ছে অন্ধকার জগতে। তারা আক্রান্ত হচ্ছে নানা মানসিক রোগে এবং ঝরে পড়ছে বিদ্যাপীঠ থেকে।বখাটেপনা তাকে এমনভাবে চেয়ে বসেছে যা অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত করছে। অপর দিকে অযৌক্তিক যৌতুকপ্রথা ও স্বার্থপরতা এবং লোভ।যা তাকে একেবারেই অন্ধ বানিয়ে ফেলে। এ থেকে শুরু হয় নির্যাতন এবং বিচ্ছেদের ঘটনা। আর মামলা হামলা তো আছেই।

এরই ধারাবাহিকতায় ছাতকে জামাইর দায়ের কুপে শ্বশুড় খুন হয়েছেন। এ ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ- সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের ধারণ বাজার এলাকার একটি ভাড়াটে বাসায়। জামাই সেলিম উদ্দিন পেশায় সিএনজি চালক তার গ্রামের বাড়ি একই ইউনিয়নের সাউদপুরে। তিনি থাকতেন ধারণ বাজার সংলগ্ন একটি ভাড়াটে বাসায়। ওই বাসায় ১৫ এপ্রিল শনিবার রাত ১০ টার দিকে শশুড় মকবুল আলীকে ডেকে নিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

স্থানীয় সুত্রে জানাযায়, দক্ষিণ খুরমা ইউনিয়নের গোরাদেও গ্রামের বাসিন্দা শশুড় মকবুল আলীকে বাসায় খবর দিয়ে আনেন সেলিম উদ্দিন। রাতে বাসায় কি নিয়ে তার শশুড়ের সাথে ঝগড়াঝাটি হয়েছে। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দা’ দিয়ে কুপিয়ে সে মকবুল আলীকে হত্যা করে। স্থানীয়রা আহত অবস্থায় মকবুল আলীকে উদ্ধার করে সিলেট ওসমানি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তার মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মকবুল আলীর ২ ছেলে মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। স্হানীয় জনতা খুনি সেলিম উদ্দিন ও তার ভাই আইন উদ্দিনকে আটক করে থানা পুলিশে সোপর্দ করেছেন।

কোর্টে তাদের বিচার হবে,ফাঁসি বা যাবজ্জীবন নয়তোবা বেকসুর খালাস! কিন্তু ততক্ষণে অনেক দূর পানি গড়াল।।তছনছ হয়ে গেল দুটি পরিবারের স্বপ্ন। থমকে দাঁড়ালো জীবনের গতি!

ইয়া আল্লাহ এ সমস্ত ঘটনা থেকে দেশ ও জাতিকে পরিত্রাণ দাও। মানুষের মধ্যে সুমতি ও বোধোদয় দান করো, আমিন।

-লেখক:

মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন

সম্পাদক, প্রান্তিক জনপদ।