ডাকসু নির্বাচন: কমিশনারের আলোচনায় ডজনখানেক শিক্ষকের নাম
অনলাইন ডেস্ক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ নিয়ে আলোচনায় রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির অন্তত এক ডজন শিক্ষক। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হলেও কমিশন গঠনে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঈদের ছুটি ও কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রফেসরের অনুপস্থিতির কারণে প্রক্রিয়ায় কিছুটা বিলম্ব হলেও কাজ “সময়সূচী অনুযায়ী” এগোচ্ছে। প্রশাসনের ভাষ্য অনুযায়ী, ইতোমধ্যে তিনজন শিক্ষকের নাম নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রাথমিকভাবে বাছাই করা হয়েছে। তারা হলেন- উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন; গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. এসএম শামীম রেজা; এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাজী মারুফুল ইসলাম।
তবে এই প্রস্তাব এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হয়নি। সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের পরেই তা চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে।
এছাড়া কমিশনের সম্ভাব্য সদস্য বা বিকল্প কমিশনার হিসেবে আলোচনায় রয়েছেন আরও কয়েকজন সিনিয়র শিক্ষক। তাদের মধ্যে রয়েছেন- ব্যাংকিং ও বীমা বিভাগের অধ্যাপক ও পরিচালক ড. মো. শাহিদুল ইসলাম জাহিদ; স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. নাসরিন সুলতানা; শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক শারমিন কবির; বাংলা বিভাগের অধ্যাপক তারিক মঞ্জুর; সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানী; এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক শাহ শামীম আহমেদ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, কমিশনার পদের পাশাপাশি নির্বাচন পরিচালনার নীতিমালা ও সময়সীমা নিয়েও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা চলছে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছিল, মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে কিন্তু নানা নাটকীয়তায় তা হয়ে উঠেনি।
এদিকে জুন মাসের ২ তারিখ নাগাদ নির্বাচন কমিশন গঠনের ব্যাপারে উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে অনশনরত একদল শিক্ষার্থীকে আশ্বস্ত করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এমন আশ্বাসে তারা অনশন থেকে সরে আসে; কিন্তু ওই তারিখ পেরিয়ে গেলেও দেখা মেলেনি কাঙ্ক্ষিত সেই নির্বাচন কমিশনের। ২ জুন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জানানো হয়, ঈদের পরেই গঠন করা হবে নির্বাচন কমিশন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন সূত্র বলছে, নির্বাচন কমিশন গঠন ও নির্বাচন কমিশনার চূড়ান্ত করার জন্য ঈদের পর জরুরি সিন্ডিকেট অধিবেশন আয়োজনের কথা রয়েছে। আগামী ১৬ জুন বিকেল ৫টায় সিন্ডিকেট মিটিং বসবে বলে জানিয়েছেন তারা।
সাধারণত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নির্বাচন কমিশনার (বা প্রধান নির্বাচন কমিশনার) নিয়োগ দিয়ে কমিশন গঠন করে থাকেন। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা কর্মকর্তা হয়ে থাকেন। কমিশন গঠন করার সময় গ্রহণযোগ্যতা, নিরপেক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।
মূলত নির্বাচন কমিশন ৩-৬ সদস্য বিশিষ্ট হয়ে থাকে; যেখানে ১ জন প্রধান এবং ২ থেকে ৫ জন সহকারী বা তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে থাকেন। সাধারণত ১ জন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং ২ জন সহকারী নির্বাচন কমিশনার এবং ৩ জন সদস্য থাকেন। এই কমিশনের দায়িত্ব- ভোটার তালিকা প্রস্তুত করা; নির্বাচনকালীন বিধি-নিষেধ নির্ধারণ; মনোনয়ন যাচাই-বাছাই; নির্বাচনের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও পরিচালনা; এবং নির্বাচন শেষে ফলাফল ঘোষণা করা।
ডাকসু নির্বাচন কার্যক্রমের অগ্রগতির ব্যাপারে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ এবং উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সাইমা হক বিদিশাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি। মূলত ডাকসু নির্বাচন কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করতে চায় না এবং সাংবাদিকদের কৌশলে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য দপ্তরের অফিস সহকারীদের একাধিক সূত্র।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি হল সংসদ নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালনের জন্যও প্রচুর শিক্ষক আমাদের প্রয়োজন। সাধারণত প্রতিটি হলে দুইজন রিটার্নিং অফিসার দায়িত্ব পালন করেন- তাদের একজন উপাচার্য এবং অন্যজন হল প্রভোস্ট সিলেক্ট করে দেন।
দায়িত্ব পালনে আগ্রহী প্রফেসরদের খুঁজে বের করতে তাাদের কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৯ সালে ডাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর থেকে একাধিকবার ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের দাবি উঠলেও নানা কারণে তা পিছিয়ে যায়। এবারের উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে, এটি হবে দীর্ঘদিন পর আবার ডাকসু নির্বাচন আয়োজনের একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

No comments: