শ্যামলবাজার সিরাজ মহমা উচ্চবিদ্যালয়ে ঈদ পুনর্মিলনী ও প্রতিবাদ সভা : ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেওয়ার শপথ
দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন
দোয়ারাবাজার উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শ্যামলবাজার সিরাজ মহমা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ সোমবার (৯ জুন) সকাল থেকেই মুখর ছিল প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থী, শিক্ষক, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের পদচারণায়। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়ার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সুনাম ও অগ্রগতির বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচারের প্রতিবাদে আয়োজিত হয় এক ব্যতিক্রমধর্মী ঈদ পুনর্মিলনী ও প্রতিবাদ সভা।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নজির উদ্দিন মাস্টারের সভাপতিত্বে এবং মো. শামীম সাজ্জাদ শাহীনের সঞ্চালনায় সভার সূচনা হয়। স্বাগত বক্তব্যে বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহীন আহমদ মাস্টার বলেন, "শ্যামলবাজার সিরাজ মহমা উচ্চবিদ্যালয় এই জনপদের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্নের ফসল। মাত্র এক বছরের ব্যবধানে শতাধিক শিক্ষার্থীর উপস্থিতি প্রমাণ করে, এই বিদ্যালয় আজ শুধু শিক্ষার কেন্দ্র নয়—এলাকার আলোকবর্তিকা।"
সভাপতির বক্তব্যে নজির উদ্দিন মাস্টার আবেগের সঙ্গে বলেন, "একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যেমন কঠিন, তা টিকিয়ে রাখা আরও কঠিন। কিছু কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়ে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। আমি সবাইকে অনুরোধ করব—এই ষড়যন্ত্রের জালে পা না দিয়ে আমরা যেন একতাবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়টির উন্নয়নে এগিয়ে আসি।"
বক্তারা একবাক্যে বলেন, শ্যামলবাজার সিরাজ মহমা উচ্চবিদ্যালয় শুধুমাত্র একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি এই জনপদের আত্মমর্যাদার প্রতীক। যারা অহেতুক বিরোধিতা করছে, তারা প্রকৃতপক্ষে সমাজের অগ্রগতির প্রতিবন্ধক। বিভ্রান্তিকর গুজব ছড়িয়ে তারা একটি শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ নষ্ট করতে চায়।
ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বিদ্যালয়ের ভূমিদাতা লন্ডনপ্রবাসী মোঃ সোহেল সিরাজী, প্রবাসী আলেম মাওলানা কয়েছ আহমদ, ফরহাদ আলম, ফয়জুল্লাহ, আব্দুল মছব্বির ও তোফায়েল আহমেদ তুহিন বিদ্যালয়ের প্রতি তাঁদের অব্যাহত সমর্থন ও ভালোবাসার কথা জানান।
ভার্চুয়াল বক্তব্যে বিদ্যালয়ের মহতী ভূমিদাতা ও লন্ডন প্রবাসী কমিউনিটি নেতা মো. সোহেল সিরাজী আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেন, "এই বিদ্যালয়ের জন্য জমি প্রদান আমার জীবনের এক গর্বিত সিদ্ধান্ত। আমি স্বপ্ন দেখি—একদিন এই বিদ্যালয় থেকে শিক্ষিত, সচেতন, নৈতিকতা-সম্পন্ন এক নতুন প্রজন্ম গড়ে উঠবে, যারা সমাজ ও জাতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে। আমি দেশের বাইরে থেকেও সর্বদা বিদ্যালয়ের খবর রাখি। সম্প্রতি যেসব অপপ্রচার ছড়ানো হচ্ছে, তা খুবই দুঃখজনক ও বিভ্রান্তিকর। সবাইকে অনুরোধ করব—এসব ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে আমরা যেন ঐক্যবদ্ধ থেকে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে কাজ করি।"
তিনি আরও বলেন, "বিদ্যালয়টি কেবল একটি অবকাঠামোই নয়, এটি হচ্ছে আমাদের স্বপ্নের বাস্তব রূপ। দেশ-বিদেশে অবস্থানরত সবাইকে আমি আহ্বান জানাই—আপনারা যার যার অবস্থান থেকে এই প্রতিষ্ঠানের পাশে থাকুন। শিক্ষাই হলো সবচেয়ে বড় দান, আর সেই দানে আমরা যেন কখনো কার্পণ্য না করি।"
সোহেল সিরাজীর বক্তব্যে উপস্থিত সকলে উদ্বুদ্ধ হন এবং প্রবাসী সমাজের সহযোগিতাকে শিক্ষাক্ষেত্রে কাজে লাগানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
উপস্থিত বিশিষ্টজনদের মধ্যে ছিলেন—সম্মানিত শালিস ব্যক্তিত্ব মোঃ রাজা আহমদ, জুনাব আলী, মাওলানা কাজী মোঃ ওয়াজিহ উদ্দিন, মোঃ মিনু মিয়া, মোঃ আইয়ুব আলী, হাজী মোঃ আব্দুল খালেক, আব্দুর রউফ, ডাঃ মোঃ গৌছুল ইসলাম, সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ এশাদ আলী, মোঃ শূনুর মিয়া, মোঃ বাচ্চু মিয়া, মোঃ লাল মিয়া, মোঃ গিয়াস উদ্দিন, মোঃ আব্দুল মান্নান, জিয়াউল হক, মোঃ সাইদুল হক সিরাজী, তোফায়েল আহমদ, এরশাদুল হক, লাল মোহাম্মদ, ইল্লাছ আলী, মোঃ কর্নেল, মোঃ জয়নুল হক, মোঃ নইজুল হক, মোঃ আল-আমিন সিরাজী, মোঃ সামছুল হক ও শেখ মোঃ রাসেল প্রমুখ।
বক্তারা সবাই দলমত নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদ্যালয়টির ভবিষ্যৎ গড়ার প্রতিশ্রুতি দেন এবং সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান।
এ যেন ছিল একদিনের মিলনমেলা—ঐক্য, উদ্দীপনা ও দৃঢ় প্রত্যয়ে মুখর এক অধ্যায়।

No comments: