সংবাদ শিরোনাম

recent

দোয়ারাবাজারে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ভাঙনের মুখে পাঁচ গ্রাম

নদী ভঙ্গণেরর কবলে


দোয়ারাবাজার প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারে ইজারাবহির্ভুতভাবে চেলা নদীর পাড় কেটে যত্রতত্র বালু উত্তোলনে চরম ঝুঁকিতে আছেন পাঁচটি গ্রামের বাসিন্দারা। নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি- বাড়িঘরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

ঝুঁকিপূর্ণ গ্রামগুলো হচ্ছে- নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্বচাইরগাঁও, সারপিনপাড়া, সোনাপুর, রহিমেরপাড়া ও দৌলতপুর। একটি অসাধু চক্রের বালু উত্তোলনে ভাঙন ক্রমশ ধেয়ে আসছে গ্রামান্তরে। ইতোমধ্যে অনেকেই অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন তাদের বসতঘর।

সরেজমিনে দেখা গেছে, চরম ঝুঁকিতে সারপিনপাড়ার আজাদ মিয়া, সানুর আলী, মইনুল ইসলামসহ অনেকের বসতঘর। এ সময় মুহূর্তেই নদীগর্ভে বিলীন হলো আজাদ মিয়ার ঘরখানা। মালামাল রক্ষায় অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন তার আরেকটি ঘর। জানমাল রক্ষার্থে গত তিনদিনে নিরাপদ স্থানে অনেকেই বসতঘর সরিয়ে নিয়েছেন বলে তিনি জানান।

দেখা গেছে, পাহাড়ি খরস্রোতা চেলানদীতে অপরিকল্পিত বালু উত্তোলনের ফলে পূর্বচাইরগাঁও- সোনাপুর অংশে নদীতে বাঁক ধরেছে। স্রোতের ঘূর্ণিপাকে ওই পাঁচ গ্রামের কাঁচা সড়কটির ৫শ' গজ এলাকা নদীতে চলে গেছে। পরে দুই গ্রামের ফসিল জমির ওপর দিয়ে বিকল্প সরু রাস্তা দিয়ে কোনোমতে চলাচল করছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয়রা জানান, নদীর পাড় কেটে যত্রতত্র বালু উত্তোলনে ভাঙনে বিলীন হয়েছে পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের ২০টি বসতঘর, একটি স্কুল, স্থানীয় কাস্টমস অফিস, সোনাপুর, দৌলতপুর, রহিমেরপাড়া, সারপিনপাড়া গ্রামের অন্তত ৫০টি বসতঘরসহ একাধিক গ্রামীন সড়ক। অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন এলাকাবাসী।
পূর্বচাইরগাঁওয়ের শাহজাহান মিয়া জানান, '২ একর জমিসহ তার শেষ সম্বল বসতভিটাও নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এখন অন্যের বাড়িতে মাচা বেঁধে পরিবারসহ নামমাত্র মাথাগোঁজার ঠাঁই করেছেন।'
সারপিনপাড়ার আজাদ মিয়া বলেন, ‘চেলা নদী শুধু বাড়িঘরই নয়, আমাদেরও গিলে খাচ্ছে। এ নিয়ে পাঁচবার বসতবাড়ি স্থানান্তর করেছি। জমিজমা সবই নদীগহ্বরে চলে গেছে। আমাদের দেখার কেউ নেই। মন্ত্রী, এমপি,  চেয়ারম্যান, কেউই আমাদের খোঁজ নেননি। শুধু নির্বাচন এলেই তাদের দেখা মিলে।'
স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়েজ উদ্দিন বলেন, 'স্বাধীনতার ৫২ বছরেও চেলা নদীর উভয়তীরের মানুষের জীবনমানের কথা কেউই চিন্তা করেনি। চেলা নদীতে অবৈধভাবে লুটেপুটে খাচ্ছে অসীম ক্ষমতাধর বালুখেকো মহল। ফলে নদীগর্ভে ক্রমশ বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ওই পাঁচটি গ্রাম রক্ষায় বালুমহাল বন্ধ করে নির্ধারিত স্থানে দ্রুত বাঁধসহ গ্রামীন সড়ক নির্মাণের দাবি জানান তিনি।'
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আম্বিয়া আহমদ বলেন, ‘ভাঙন কবলিত সড়কগুলো মেরামতে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা অবহিত করলে টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়ণ করে বরাদ্দ চেয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রস্তাব দেওয়া হবে।'
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেওয়ান আল তানভীর আশরাফী চৌধুরী বলেন, 'শুধু চেলা নদীই নয়, উপজেলার সুরমা, চেলা, খাসিয়ামারা নদীতীরের মানুষ নদী ভাঙনে ক্রমশ নিঃস্ব হচ্ছেন। বড় কোনো প্রকল্প না পাওয়ায় কিছুই করা সম্ভব হচ্ছেনা।'
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী (পওর বিভাগ-২) শামসুদ্দোহা  বলেন, 'পাহাড়ি চেলা নদীর তীব্র স্রোতে পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। ভাঙনরোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণে বড় প্রকল্প প্রয়োজন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা যদি ডিও লেটার দেন তাহলে বড় প্রকল্প বরাদ্দ সম্ভব।

দোয়ারাবাজারে নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ভাঙনের মুখে পাঁচ গ্রাম Reviewed by প্রান্তিক জনপদ on 8/30/2023 08:56:00 PM Rating: 5

No comments:

Copyright © Prantik Jonopd All Right Reseved 2020
Created by Thawhid Shahin

যোগাযোগ ফর্ম

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.