শাইখ মুহাম্মাদ যাকারিয়া আল-কান্দাহলভী রহমাতুল্লাহ আলাইহি : ইলমুল হাদীসে তাঁর অবদান
-প্রফেসর ড সৈয়দ মাকসূদুর রহমান
চেয়ারম্যান
আল হাদীস এণ্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ,কুষ্টিয়া ,
বাংলাদেশ।
ভূমিকা:(introduction)
উনবিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে পাক ভারত উপমহাদেশে যে সকল মুহাদদ্দিস বিশ্বব্যাপী
খ্যাতি অর্জন করেন শাইখ মুমুহাম্মাদ যাকারিয়া আল -কান্দুলভী রাহমাতুল্লাহ তাদের মধ্যে
অন্যতম। তিনি শাইখ রশিদ আহম্মদ গাংগুহী ও খলীল আহম্মদ সাহারানপুরী দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন।তিনি দীর্ঘ ৮২বছর বয়স পর্যন্ত ইলমুল হাদীসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ
খেদমত করার সুযোগ পেয়েছেন।
মুহাম্মাদ যাকারিয়া ইবনে মুহাম্মাদ ইয়াযদি সিদ্দিকী কান্দুলভী সাহারানপুরী ইবনে
মুসাম্মাদ ইয়াহিয়া আ:-সিদ্দিকী আল-কান্দুলভী শাইখুল হাদীস" এবং তাবলিগী জামাতের
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচিত, তাঁর চাচা মাওলানা মুহাম্মদ
ইলিয়াস প্রতিষ্ঠিত মিশনারি ও সংস্কার আন্দোলন তাকে প্রভাবিত করেছে। মূল কথা হলো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
এর পর আর কোন নবী আসবে না। আলিমদের সে দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ
করেন,
يَرْفَعِ
اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ ۚ
وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
তোমাদের মধ্যে যারা ঈমানদার এবং যারা জ্ঞানপ্রাপ্ত, আল্লাহ তাদের মর্যাদা উচ্চ করে দিবেন। আল্লাহ খবর রাখেন যা কিছু
তোমরা কর।
(সুরা আল মুজাদালাহ-১১)
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَاعْلَمُوا
أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِّنَ الْأَمْرِ
لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي
قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ
أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
তোমরা জেনে রাখ তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রসূল রয়েছেন। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের
আবদার মেনে নেন,
তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানের
মহব্বত সৃষ্টি করে দিয়েছেন এবং তা হৃদয়গ্রাহী করে দিয়েছেন। পক্ষান্তরে কুফর, পাপাচার ও নাফরমানীর প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন। তারাই
সৎপথ অবলম্বনকারী।
[ সুরা হুজুরাত ৪৯:৭)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,
فالحديث
المشار إليه رواه الحاكم في المستدرك على الصحيحين بلفظ: إن الله قسم بينكم
أخلاقكم كما قسم بينكم أرزاقكم، وإن الله يعطي الدنيا من يحب ومن لا يحب، ولا يعطي
الإيمان إلا من يحب
এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ তাআলা যাকে ভালোবাসা শুধুমাত্র তাকে ঈমান
দান করেন। আলোচ্য প্রবেন্ধ শাইখুল হাদীস মুহাম্মদ
যাকারিয়া রাহমাতুল্লাহ আলাইহি জীবনী এবং বিভিন্ন বিষয়ে গ্রন্থ রচনা ও গবেষণার কাজ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
নাম ও পরিচিতি
(Name and
contact)নাম:মুহাম্মদ
ইমামুল হাদীস ফিল হিন্দ, আলিম ,ফকীহও মুফাসসির শাইখুল হাদীস ইসলামী বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয়
হাদীসের পন্ডিত মুখাগ্নি হিসেবে প্রসিদ্ধ।
মুহাম্মাদ যাকারিয়া আল-কান্দাহলভী বংশধারা হলো- মুহাম্মদ যাকারিয়া বিন শাইখ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া
বিন শাইখ ইসমাইল আল-কান্দাহলাভি আল-মাদানী, রাহমাতুল্লাহ
আলাইহিমযাকারিয়া,উপাধি:শাইখুল হাদীস,জায়গার সাথে সম্পর্কিত
হয়ে আল-কান্দাহলভী
জম্মু গ্রহণ (His
birth)
তিনি ২ ফেব্রুয়ারী ১৮৯৮ সালে মুতাবেক
১৩১৫ হিজরী রমজান মাসে১১তারিখ রাতের বেলায় ভারতের কান্দাহল নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন।
কান্ডাহলা যা দাহলির নিকটে মোজাফফরনগর অন্যতম
এমন একটি পরিবারে যা ইলমও দ্বীনের দিক থেকে প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ ছিল।
তাঁর শিক্ষা জীবন((His Educational Leif)
শাযইখ যাকারিয়া ১৮৯৮ সালে কান্ধলায় জন্মগ্রহণ করেন।, তাঁর পিতা মাওলানা মুহাম্মদ করেছিলেন অ একজন খ্যাতিমান আলিম
ছিলেন।। তিনি দশ বছর গঙ্গোহে শহরে অবস্থান করেন।সেখানে তিনি তাঁর বাবার মাদ্রাসায়
ভর্তি হন। ১৯১০ সালে তিনি সাহারপুরে চলে আসেন । দারুল উলূম দেওবন্দের মানহাজে পরিচালিত
মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুরে পড়াশোনা করেন।
তিনি তাঁর পিতার কাছ থেকে এবং খলিল আহমদ সাহারানপুরীর কাছ থেকে হাদীসের জ্ঞান অর্জন
করেন। ১৯১৫ সালে ১৭ বছর বয়সে দাওরা হাদীস সম্পন্ন
করেন তারপর তিনি স্কুলে শিক্ষক হিসাবে যোগদান
করেন।
জাকারিয়া ছিলেন চিশতী নাসিরিয়া -ইমদাদী তররীকার বিশিষ্ট সূফী । তিনি মাওলানা সাহারানপুরীর খলিফাহ (আধ্যাত্মিক উত্তরসূরি)
ছিলেন। যিনি ১৯১৫ সালে সূফী তরীকার আমল করেন এবং ১৯২৫ সালে চারটি তারিকায় (চিশতিয়াহ, নকশবন্দিয়াহ, সোহরাওয়ারদিয়া
এবং কাদরিয়াহ) অন্যকে দীক্ষা দেওয়ার অনুমতি প্রাপ্ত হন।
তাঁর উল্খেযোগ্য শিক্ষক ী ছাত্রবৃন্দ(His famous Teachers students)
দীর্ঘ অধ্যাপনা জীবনে তাঁর অসংখ্য শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম হলেন-
*শায়খ খলীল আহমদ সাহারানপুরী
*শাইখ সৈয়দ আলী হাসান আন নদবী
শাইখ রশীদ আহমদ গাংগুহী এ ছাড়া অসংখ্য শিক্ষকের নিকট ইলম অর্জন করেন। অন্যদিকে
তাঁর প্রসিদ্ধ ছাত্রবৃন্দ
*মুহাম্মদ ইউনূস জৌনপুরী
*ইউসুফ মোতালা
* মুফতী তাকী উসমানী শায়খের
নিকট হাদীসের সনদ পেয়েছেন
কর্ম জীবন(His working life)
তিনি ১৯১৬থেকে ১৯৬৯ সাল পর্যন্ত ৫৩ বছর মাজাহিরুল উলূম সাহারানপুরে অধ্যাপনা করেন। হাদীসের ক্ষেত্রে তাঁর বিস্তৃত জ্ঞানের জন্য তাঁর
শায়খ মাওলানা খলীল আহমদ সাহারনপুরী তাঁর দেওয়া উপাধি "শায়খুল হাদীস" উপাধিতে
সুপরিচিত হন। তারপর তিনি আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের
দিকে মনোনিবেশ করেন।তিনি জীবনের শেষদিকে মদিনায়
আসেন। তিনি সৌদি নাগরিকত্ব অর্জন করেন। তিনি মুসলিম রাষ্ট্র ভ্রমণ করেন। অবশেষে তিনি মদীনায় এসে মৃত্যুবরণ করেন এবং বাকীত তাঁকে দাফন করা হয়।
পারিবারিক জীবন(His Femily life)
মুহাম্মদ মাকারিয়া কান্দুলভী দু'বার বিয়ে করেছিলেন।
তিনি প্রথমে কান্ধলায় শাইখ রউফ উল হাসানের কন্যাকে বিবাহ করেন। তাঁর আটটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিলেন: তিন ছেলে
ও পাঁচ কন্যা। তিনি ১৩৫৩ হিজরিতে ফেব্রুয়ারী
১৯৩৯ ৫ তারিখে মারা যান। তারপরে তিনি তার প্রথম
চাচাত ভাই,
মুহাম্মদ ইলিয়াসের কন্যাকে ১৩৫৬ হিজরিতে ১৯৩৩ সালে বিয়ে করেছিলেন। তিনি তাঁর তিনটি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিলেন: এক
পুত্র এবং দুই কন্যা [
গ্রন্থ রচনা (Famous writing books)
তাঁর রচিত গ্রন্থ এবং পান্ডুলিপি সহ প্রায় (১৪০) টিরও বেশি প্রকাশনা রয়েছে। তাঁর
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বিখ্যাত প্রকাশিত গ্রন্থগুলির মধ্যে রয়েছে:
*أأوجز المسالك إلى موطأ مالك
في
ثمانية عشر مجلداً
*وتعليقات على بذل المجهود شرح سنن أبي داود في أربعة عشر مجلداً ـ
*بذل المجهود في حل أبي داود ـ خليل أحمد السهارنفوري ( تعليق ) 20
جزءاً
* وتعليقات لامع الدراري على جامع البخاري لأبي مسعود رشيد أحمد
الكنكوهي
*وتعليقات الكوكب الدري على جامع الترمذي 4 مجلدات وكلاهما من أمالي
الشيخ رشيد أحمد الكنكوهي
* حجة الوداع وجزء عمرات النبي صلى الله عليه وسلم[
( مجلد )
* الأبواب والتراجم لصحيح البخاري
*سباب سعادة المسلمين وشقائهم... كتاب متوسط من الحجم الصغير
*وجوب إعفاء اللحية حققه الشيخ محمد بن آدم الكوثري
* الشريعة والطريقة، مجلد.
ـ
*المودودي ماله وما عليه.
*ـ الأستاذ المودودي ونتائج بحوثه وأفكاره. كتاب متوسط.
*ـ مكانة الصلاة في الإسلام
ـ *فضائل
الدعوة إلى الخير
وألف
كتبا عديدة بالأردية منها:
*شرح شمائل الترمذي
*حكايات الصحابة
ইলমুল হাদীসে তাঁর অবদান (Contribution to ilmul hadith)
মুহাম্মদ যাকারিয়া অর্ধ শত বছর পর্যন্ত হাদীসের দারস প্রদান করেন। এ ছাড়া অসংখ্য
হাদীসের ভাষ্য গ্রন্থ রচনা করেন। তিনি আঠারো
খণ্ডে মুওয়াত্তা মালিকের উপর গ্রন্থ রচনা
করেন। তাঁর পিতার জন্য এটি শেষ করতে খুব দেরী
করেন,
তাই তিনি এটি সম্পন্ন করে নিজের সমস্যার কথা বর্ণনা করেন এবং
তাঁর বর্ণনাকারীদের জীবনী উল্লেখ করেছেন ও শাইখগনের পরিচতি উল্লেখ করেন।
চৌদ্দ খণ্ডে সুনান আবী দাউদের ব্যাখ্যা - আবু দাউদ দ্রবীভূত করার জন্য প্রয়াস
।আল-বুখারী ,
আল তিরমিযী সম্পর্কে গ্রন্থ রচনা করেন। তারাজিম সহিহ আল বুখারীর
উপর গ্রন্থ রচনা করেন। শামাইলু তিরমিজির ব্যাখ্যা
সাহাবীদের জীবন চরিত নিয়ে গ্রন্থ রচনা করেন।সার্বিক মূল্যায়ণ করলে তাঁর ইলমুল হাদীসের
অবদান অনস্বীকার্য।
সিরিয়ার পন্ডিত আবদুল-ফাত্তাহ আবু ঘোদ্দা শাইখ যাকারিয়াকে লেখা একটি চিঠিতে লিখেছেন
যার সারমর্ম হচ্ছে-
তাঁর খ্যাতি অনুসারে, শাইখ, একজন ইমামুল হাদীস, ফকীহ,ও সাহিত্যের অধ্যাপক। অসামান্য প্রতিভাধর আলিম, ভারতবর্ষের ইলমের সুগন্ধি।
তিনি, বাস্তবতা ও রূপক মানুষের জিহ্বা, আমাদের গুরু ও
আমাদের জন্য নেআমত।শায়খ যাকারিয়ার দীর্ঘ জীবন
কামনা করি।
তাঁর মৃত্যু (His death)
তিনি সোমবার বিকেলে১৯৮৫ সালে ১৪০২ হিজরিতে শাবানের প্রথম দিনে ৮৭ বছর বয়সে মদীনায়
ইন্তেকাল করেন। শাইখ মুহাম্মদ যাকারিয়া কিন্তুসমীর ১৯৮৭ সালে রবিবার ১৬ মে সৌদি আরবের পবিত্র শহর মদিনায়
অসুস্থ হয়ে পড়েন। এক সপ্তাহ পরে তাঁর শারীরিক
অবস্থার অবনতি ঘটে ১৯৮২ সালের ২৪ শে মে সোমবার শ্বাসকষ্টের গুরুতর সমস্যা দেখা দেয়।
তাঁর মুখে তখন শুধু "আল্লাহ, আল্লাহ ছিল।" তিনি
দিনের সূর্যাস্তের নামাযের (মাগরিব) ঠিক দেড় ঘন্টা আগে বিকেল ৫ টা ৪০ মিনিটে মারা
যান। শাইখের দাফনের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল মাগরিবের নামাজের
আগে এবং দাফন করার পরে একই দিন রাতের এশার
নামাজের পরে দাফন করা হয়েছিল।
জানাজার নামায মসজিদে নববীর ইমাম শাইখ আবদুল্লাহ আল জহিমের ইমামতি করেন। লাশটি
নিকটবর্তী জান্নাতুল বাকী কবরস্থানে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। মুহাম্মদ যাকারিয়ার ইচ্ছা ছিল নবীর পরিবারের সদস্যদের
(আহল আল-বায়ত) নিকটে দাফন করা এবং তাঁর ইচ্ছানুসারে তাঁর কবরটি তাদের ঘেরের বাইরে
খনন করা হয়েছিল।
উপসংহার(Conclusion)
উপরের আলোচনা থেকে আমরা এ কথা বলতে পারি যে, শাইখ মুহাম্মদ যাকারিয়া ভারত উপমহাদেশে
জন্য ইলমুল হাদীসের একটি নক্ষত্র।তাঁর রচিত গ্রন্থ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আল হাদীস
এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে পাঠদান করা হয়। আল্লাহ তাআালা তাঁর সকল খেদমত কবুল করুন, আমীন।
চেয়ারম্যান
আল হাদীস এণ্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ,কুষ্টিয়া ,
বাংলাদেশ।

No comments: