ঘুরে এলাম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পাগলা বড় মসজিদ
![]() |
পাগলা মসজিদ, সুনামগঞ্জ |
ফিচার::
বন্যাপ্লাবিত, বন্যাকবলিত, বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে মানুষে আহাজারি, রাস্তাঘাটের অবস্থা ক্ষতবিক্ষত, ভঙ্গুর, বিধ্বস্ত, বিকৃত পরিবেশ, ঘরবাড়ির বিভৎস চিত্র, অনাহারে অর্ধাহারে বন্যার্ত মানুষ এমনি প্রেক্ষাপটে কারোরই মনে আনন্দ থাকার কথা নয়।তবুও মানসিক বিষাদ, বিষন্নতার হাবুডুবু মাঝে একটুকু হাসির ঝিলিক। To improve mental condition মাত্র। প্রিয় সুহৃদদের একান্ত অনুরোধে ঘুরে এলাম, দেখে এলাম সুনামগঞ্জের দেখার হাওর বেষ্টিত কিছু অঞ্চল। দেখার হাওরের বিপুল জলরাশির বুক চিরে নৌকা যখন ছুটে চলছিল সামনে পেছনে হাজারো ঢেউর রেখা মিলিয়ে যাচ্ছিলো অজানা এক গন্তব্যে।
শুরুতেই দেখার হাওর:
যাত্রার শুরু দোয়ারাবাজারের পান্ডারগাঁও ইউনিয়ন থেকে। আমাদের যাত্রা সঙ্গীদের মধ্যে ছিলেন মাও. আব্দুল হক, মাও. আব্দুল হান্নান, আব্দুল হাই বশির, জুলফিকার আলম, সানুর আলম, দিলোয়ার হোসেন, কামরান হোসেন, রিয়াদুল হক মাহফুজ, জসিম উদ্দিন, আনর আলী, সুহেল আহমদ। ইউনিয়নের দক্ষিণ পশ্চিমের শেষ গ্রাম পলিরচর শেষ হলেই যে বিশাল জলরাশির দেখা মিলে তার নাম দেখার হাওর।
![]() |
হাওরে ভাসতে ভাসতে নাস্তা গ্রহণ। |
হাওর এলাকা সুনামগঞ্জে ছোট বড় মিলিয়ে ১২৪টি হাওর ও বিল আছে । এর মধ্যে কয়েকটি হাওর বিশেষ উল্লেখ করার মত, দেখার হাওর তার একটি। এই হাওর সুনামগঞ্জ সদরের পূর্ব দিকে ও সিলেট সুনামগঞ্জ সড়কের উত্তর পাশে অবস্থিত। দেখার হাওরের আয়তন ৮৯১০ হেক্টর। সম্পূর্ণ জমিতে ধান চাষ হয়। এটাকে হাওরাঞ্চলের ধানে বাড়াল বলা হয়। দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সুনামগঞ্জ সদর, ছাতক, দোয়ারা উপজেলা জুড়ে রয়েছে দেখার হাওরের সিমানা। বড়ধই বিল নামে দেখার হাওরের একটি অন্যতম ও বড় বিল রয়েছে।বিলের টঙ্গি ঘর ভিটা থেকে প্রায় ১০ফুট উপরে।পিলারের উপর টিনশেড পাকাঘর, থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা বিদ্যমান।
সুনামগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা জামে মসজিদ:
সুনামগঞ্জ জেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের রায়পুর গ্রামে অবস্থিত শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী এই জামে মসজিদটি। দেখার হাওরের দক্ষিন-পশ্চিম কোণে, সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের একটু উত্তরে এই সুপ্রাচীন নান্দনিক, ঐতিহাসিক মসজিদটি অবস্থিত।
রায়পুর মহাজন বাড়ির জনাব ইয়াসিন মির্জা মহোদয় মসজিদটির নির্মান কাজ শুরু করেছিলেন ১৯৩১ সালে। টানা ১০ বৎসর কাজ করে নির্মান ব্যয় হয়েছিল ১০ লক্ষ টাকা। মূলত নির্মাণ শৈলী ও অপূর্ব কারুকাজের জন্য এই মসজিদটি এতো বিখ্যাত। গম্বুজ ও মসজিদের ভিতরে কারুকাজ সহ অনেক দামী পাথর ব্যবহার করা হয়েছে।
![]() |
মসজিদের সামনে লেখক ও সফর সঙ্গী। |
জনাব ইয়াসিন মির্জা কলিকাতা ও দিল্লি থেকে স্থপতি এবং নির্মাতা আনিয়েছিলেন। প্রধান স্থপতি মুমিন ওস্তাগর ছিলেন, তাজমহলের স্থপতি দের একজনের বংশধর। এখনও মহাসিং নদীর তীরে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে শত বৎসরের পুরানো দৃষ্টি নন্দন এই দু'তলা মসজিদটি। সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় কোনো ধরনের রডের ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ন ইটের উপর নির্মিত হয়েছিল এই নান্দনিক স্থাপনাটি।
সম্ভবত ১৯৬৫ইং সালে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান পাখি শিকারের উদ্দেশ্যে পাগলায় এসেছিলেন এবং এই মসজিদে নামাজ পড়েছিলেন।তাছাড়া তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান মিটিং করেছিলেন। প্রেসিডেন্ট আসা উপলক্ষে প্রচুর গনজমায়েতের কারনে এই এলাকায় তখন তড়িঘড়ি করে ১৫০ টি নলকূপ স্থাপন করা হয়েছিল।
কথিত আছে যে এই মসজিদে রাতে জ্বীন এসে নামাজ পড়ে। এলাকার অনেকে তাই বিশ্বাস করে। এজন্য নাকি মসজিদের দুই তিনটি জানালা খোলা রাখা হয়।মসজিদের নদী প্রান্তে রয়েছে সুন্দর করে বাঁধানো পাকা ঘাট। প্রচুর সুপারি, নারিকেল এবং খেজুর গাছ। খুবই মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশ যে কোন ভ্রমণ পিপাসু ও মুসল্লিদের প্রাণ শীতল করবে। সুনামগঞ্জের এই ঐতিহাসিক ঐতিহ্যটি যুগযুগ ধরে অটুট, অক্ষুন্ন, অম্লান থাকুক। ভবিষ্যত প্রজন্মের সংস্পর্শে এবং পবিত্র হাতে চোঁয়ায় মসজিদটি আরো উন্নতি সাধন করুক, একটি মুসলিম ঐতিহাসিক স্থাপনা হিসাবে আরো শোভাবর্ধক, সৌন্দর্য ও সমৃদ্ধি লাভ করুক।আমিন।
দেখা হল শেষ, এবার ফেরার পালা:
নামাজ আদায় করে আবারো রওয়ানা দিলাম বাড়ির গন্তব্যে। অথৈ জলরাশি উপর দিয়ে ছুটে যাচ্ছে আমাদের নৌকা। করোনা, বন্যায় ভারাক্রান্ত জীবনের যেন কিছুটা গতি সঞ্চিত হয়েছে। সময়মত মহান আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আমরা পৌছলাম আমাদের নিজ নিজ ঠিকানায়।
লেখক: মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন, সম্পাদক, প্রান্তিক জনপদ
তথ্যসূত্রঃ
১. ( বীর মুক্তিযুদ্ধা এডভোকেট আসাদ উল্লাহ সরকার)
ঘুরে এলাম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা পাগলা বড় মসজিদ
Reviewed by প্রান্তিক জনপদ
on
7/17/2020 01:42:00 AM
Rating:

No comments: